বাংলাদেশ সরকারী কর্তৃক নিষিদ্ধ থাকার পরেও টেকনাফ উপজেলায় কাঁচা বাজার থেকে শুরু করে ডিপার্টমেন্টাল ষ্টোর, বিপনী বিতানগুলোতে ব্যবহার করছে নিষিদ্ধ পলিথিন ব্যাগ। বিপনন ও ব্যবহারকারীর উপর রয়েছে জরিমানা। এতকিছুর পরেও থেমে নেই নিষিদ্ধ পলিথিনের ব্যবহার।
টেকনাফ উপজেলায় কি পরিমাণ পলিথিনের ব্যবহার হয় তা বিভিন্ন জায়গায় ময়লা-আর্বজনার স্তুপ দেখলেই বোঝা যায়। প্রতিদিন শত শত পলিথিন ড্রেনে ফেলা হচেছ। ফলে ড্রেনগুলোতে ময়লা-আর্বজনা আটকে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি ও পরিবেশ দূষণ হচ্ছে। আইন আর জরিমানার বিধান থাকার পরেও টেকনাফে মাত্রাতিরিক্ত ভাবে বেড়ে গেছে পলিথিন ব্যাগের স্তুপ।
স্থানীয়দের অভিমত, উপজেলা প্রশাসনের তদারকির অভাবে দিন দিন পলিথিনের ব্যবহার টেকনাফে মারাতক আকার ধারণ করেছে সরকার দূষণ মুক্ত পরিবেশ সংরক্ষণের স্বার্থে সারাদেশে পলিথিন শপিং ব্যাগ ব্যবহার ও বাজারজাত করণের উপর বিধিনিষেধ আরোপ করেছে। বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ১৯৯৫ (সংশোধন-২০০২) অনুসারে পরিবেশ জন স্বাস্থ্য ও সুরক্ষার স্বার্থে সরকার পলিথিন ক্রয়-বিক্রয় ও বাজারজাত করণ নিষিদ্ধ করে।।এর আইনের সর্বনিম্ন ১০ হাজার টাকা জরিমানা সহ ৬ মাসের সশ্রম কারাদণ্ড এবং ব্যবহারকারীর উপর তাৎক্ষনিক ৫’শ টাকা জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে । ২০০২ সালে সংসদে বিল পাশের মাধ্যমে পলিথিনের উৎপাদন, বিক্রি ও ব্যবহার সম্পূর্ণরুপে নিষিদ্ধ করে সরকার। ১৯৯৫ সালের পরিবেশ সংরক্ষণ আইনের কেউ যদি নিষিদ্ধ ঘোষিত পলিথিন সামগ্রী উৎপাদন, আমদানি বা বাজারজাত করে তার শাস্তি ১০ বছর কারাদণ্ড অথবা ১০ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবে। কোনো ব্যক্তি যদি নিষিদ্ধ পলিথিন সামগ্রী বিক্রি বা বিক্রির উদ্দেশ্যে প্রদর্শন, গুদামজাতকরণ, বিতরণ বা বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে পরিবহন বা বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহার করে, তার শাস্তি হবে ছয় মাস পর্যন্ত কারাদণ্ড অথবা ১০ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ড।
পরিবেশ বিশেষজ্ঞদের মতে, পলিথিন আমাদের পরিবেশের জন্য মারাতক হুমকি, অপচনশীল এ যৌগ পদার্থটি মানবদেহে ক্যান্সারের প্রাদুর্ভাব ঘটায়। পলিথিন তৈরিতে এমন ধরনের রাসায়নিক উপাদান ব্যবহৃত হয়, যা মাটির নিচে কয়েকশ বছর থাকলেও পচন ধরে না। যার কারণে আজ মাটি হারাচ্ছে উর্বরতা। নদী হারাচ্ছে নাব্যতা। সরকার দূষণ মুক্ত পরিবেশ সংরক্ষণের স্বার্থে সারাদেশে পলিথিন শপিং ব্যাগ ব্যবহার ও বাজারজাত করণের উপর বিধিনিষেধ আরোপ করেছে।পলিথিন শপিং ব্যাগ নির্বিচারে ব্যবহার পরিবেশের জন্য মারাতœক ক্ষতিকর এবং এটি পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট করে। এর কারণে জমির উর্বরতা স্থায়ীভাবে নষ্ট হয় যায়।
অনুসন্ধানে দেখা যায়, টেকনাফ উপজেলায় এ পরিবেশ আইনে বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করে এক শ্রেণীর কালো বাজারী পার্শ্ববর্তী মিয়ানমার থেকে নিষিদ্ধ পলিথিন এনে টেকনাফের বাজারে সয়লাব করছে। চোরাকারবারীরা বিভিন্ন সীমান্ত পয়েন্ট দিয়ে পন্যের আড়ালে নিয়ে আসছে শত শত কেজি নিষিদ্ধ পলিথিন। আর এসব পলিথিন পৌরএলাকার লামার বাজারে গুদামে রেখে উপজেলা জুড়ে বাজারজাত করা হচ্ছে। খুচরা দোকানদাররা ক্রেতাদের হাতে তুলে দিচ্ছে পন্য ভর্তি নিষিদ্ধ পলিথিন। ক্রেতারাও বহনের সুবিধার্থে স্বষ্ফুর্তভাবে তা গ্রহণ করে নিচ্ছে। কিছু অসাধু ব্যবসায়ীরা কৌশলে ছড়িয়ে দিচ্ছে পুরো টেকনাফে নিষিদ্ধ পলিথিন ব্যাগ।পলিথিন ব্যবহারে জরিমানা থাকলেও সংশিষ্ট প্রশাসনের তৎপরতা না থাকায় তা সর্বত্রে ছড়িয়ে পড়ছে। টেকনাফ উপজেলার হোয়াইক্যং, হ্নীলা, শামলাপুর, সাবরাং, শাহপরীরদ্বীপ, সেন্টমার্টিন দ্বীপ, বাসষ্টেশন সহ বিভিন্ন বাজার ঘুরে পলিথিন ব্যবহারের দৃশ্য দেখে বোঝার উপায় নেই দেশে পলিথিন ব্যাগ নিষিদ্ধ করা হয়েছে এবং ব্যবহারকারীর উপর রয়েছে জরিমানার বিধান।এ বিষয়ে যাদের তদারকি করার কথা তারা নিজেরাই ভঙ্গ করছে পরিবেশ আইন। পলিথিন ব্যবহারে বাধা না দিয়ে নিজেরাই অতি উৎসাহে পলিথিন ব্যাগ ব্যবহার করছে।
টেকনাফের বিভিন্ন ব্যবসায়ীরা জানান, দেশে পলিথিন ব্যবহার নিষিদ্ধ হলেও টেকনাফে এর প্রভাব পড়েনি। বিশেষ করে তরকারী বাজার, মাছ বাজার, ফলমূল ও মুদি দোকানগুলোতে এর ব্যবহার বেশি। প্রতিরোধের চেয়ে টেকনাফের জনগণকে পলিথিনের ক্ষতিকর দিক সর্ম্পকে অবহিত করতে হবে এবং এর বিকল্প ব্যবহারে উৎসাহিত করতে হবে। এ ব্যাপারে সরকারী-বেসরকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে ব্যাপক প্রচারণা চালাতে হবে বলে তারা মনে করেন
পাঠকের মতামত: